১১:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

গতকাল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া বিমান বিধ্বস্তের হৃদয়বিদারক ঘটনা আমাদের জাতিগত চেতনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে, তারা কেবল কোমলমতি শিক্ষার্থী ছিল না—তারা ছিল আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে প্রত্যাশার প্রতীক। স্কুলে যাওয়া সেই হাস্যোজ্জ্বল মুখগুলো মুহূর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এই অপ্রত্যাশিত ট্র্যাজেডি আমাদের হৃদয়ে এক শূন্যতা ও গা শিউরে ওঠা বিষাদ রেখে গেল।

আমি নিজেকে বারবার কল্পনা করেছি শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরীর স্থানে। নিজের চোখের সামনে এতগুলো শিশু নিঃশেষ হয়ে যেতে দেখেও তিনি ভেঙে পড়েননি, বরং অসাধারণ সাহস ও মানবিকতার পরিচয় দিয়ে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে জীবনদানের পথে এগিয়ে এনেছেন। তাঁর সেই উপস্থিত বুদ্ধি, দৃঢ়তা, আর অসীম মমতা আমাদের জাতির শিক্ষক সমাজের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জাগায়। তাঁর কর্ম শুধু শিক্ষকতা নয়, এক অলিখিত নায়িকার প্রতিচ্ছবি।

বিধ্বস্ত শিশুগুলোর মাঝে আমি দেখতে পেয়েছি আমার নিজের সন্তানের মুখ। সেই চিন্তায় বুক হিম হয়ে আসে। আমরা যারা সন্তান হারাইনি, তারাও যেন মানসিকভাবে সেই শোকের ভাগীদার। এই ঘটনা শুধু কিছু পরিবারকে শোকবিহ্বল করেনি, বরং পুরো জাতিকে এক গভীর বেদনার স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছে।

তবু আমাদের থেমে গেলে চলবে না। শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। শিক্ষাঙ্গন ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে আরও সচেতনতা, আরও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণ যেন একটি জাতির পাথেয়—এই বোধ সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আজ আমরা যাদের হারিয়েছি, তারা যেন হারিয়ে না যায় বিস্মৃতির অতলে। তাদের স্মৃতি হোক আমাদের আগামীর প্রতিজ্ঞা—
“আর নয় অবহেলা, আর নয় প্রস্তুতির ঘাটতি। প্রতিটি শিশুর প্রাণ অমূল্য, তাদের জন্য চাই সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও স্নেহের পরিবেশ।”

এই হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা যেন শুধু চোখের জল না ফেলি, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ, সচেতন ও মানবিক সমাজ নির্মাণে একসঙ্গে অঙ্গীকার করি।

আজকের শোক হোক আগামীর জাগরণ।
আজকের রক্তক্ষরণ হোক আগামী বাংলাদেশ গঠনের শপথ।

Tag :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেলেন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের তিন বিজ্ঞানী

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

Update Time : ০৮:০২:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

গতকাল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া বিমান বিধ্বস্তের হৃদয়বিদারক ঘটনা আমাদের জাতিগত চেতনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে, তারা কেবল কোমলমতি শিক্ষার্থী ছিল না—তারা ছিল আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে প্রত্যাশার প্রতীক। স্কুলে যাওয়া সেই হাস্যোজ্জ্বল মুখগুলো মুহূর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এই অপ্রত্যাশিত ট্র্যাজেডি আমাদের হৃদয়ে এক শূন্যতা ও গা শিউরে ওঠা বিষাদ রেখে গেল।

আমি নিজেকে বারবার কল্পনা করেছি শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরীর স্থানে। নিজের চোখের সামনে এতগুলো শিশু নিঃশেষ হয়ে যেতে দেখেও তিনি ভেঙে পড়েননি, বরং অসাধারণ সাহস ও মানবিকতার পরিচয় দিয়ে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে জীবনদানের পথে এগিয়ে এনেছেন। তাঁর সেই উপস্থিত বুদ্ধি, দৃঢ়তা, আর অসীম মমতা আমাদের জাতির শিক্ষক সমাজের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জাগায়। তাঁর কর্ম শুধু শিক্ষকতা নয়, এক অলিখিত নায়িকার প্রতিচ্ছবি।

বিধ্বস্ত শিশুগুলোর মাঝে আমি দেখতে পেয়েছি আমার নিজের সন্তানের মুখ। সেই চিন্তায় বুক হিম হয়ে আসে। আমরা যারা সন্তান হারাইনি, তারাও যেন মানসিকভাবে সেই শোকের ভাগীদার। এই ঘটনা শুধু কিছু পরিবারকে শোকবিহ্বল করেনি, বরং পুরো জাতিকে এক গভীর বেদনার স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছে।

তবু আমাদের থেমে গেলে চলবে না। শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। শিক্ষাঙ্গন ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে আরও সচেতনতা, আরও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণ যেন একটি জাতির পাথেয়—এই বোধ সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আজ আমরা যাদের হারিয়েছি, তারা যেন হারিয়ে না যায় বিস্মৃতির অতলে। তাদের স্মৃতি হোক আমাদের আগামীর প্রতিজ্ঞা—
“আর নয় অবহেলা, আর নয় প্রস্তুতির ঘাটতি। প্রতিটি শিশুর প্রাণ অমূল্য, তাদের জন্য চাই সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও স্নেহের পরিবেশ।”

এই হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা যেন শুধু চোখের জল না ফেলি, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ, সচেতন ও মানবিক সমাজ নির্মাণে একসঙ্গে অঙ্গীকার করি।

আজকের শোক হোক আগামীর জাগরণ।
আজকের রক্তক্ষরণ হোক আগামী বাংলাদেশ গঠনের শপথ।