১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ ৩৬ জুলাই

৩৬ জুলাই – আজকের দিনটি ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে। এটি কেবল একটি তারিখ নয়, বরং এক বিপ্লবের নাম, যেখানে নিপীড়িত জনগণ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বুক চিতিয়ে। এই দিনটি গণ-অভ্যুত্থান দিবস নামে স্মরণীয় হয়ে আছে আমাদের জাতীয় চেতনার পরতে পরতে।

এটি কাল্পনিক তারিখ হলেও, এটি বহু মানুষের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে যাওয়া এক ঐতিহাসিক দিনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।  দীর্ঘ সময় ধরে চলা একদলীয় কর্তৃত্ববাদ, দুর্নীতি, গুম, খুন এবং বাক-স্বাধীনতার হরণের বিরুদ্ধে যখন দেশের মানুষ দিশেহারা, তখন ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ মিলে গড়ে তোলে এক ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ৩৬ জুলাই তারিখে তারা রাজপথে নেমে আসে—শুরু হয় এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান।

এই দিনটি কেবল একটি সরকার পতনের দিন নয়—এটি ছিল নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের দিন। এই বিপ্লবে জীবন উৎসর্গ করেন প্রায় ২০০০ ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল রক্তে। আহত হন হাজার হাজার আন্দোলনকারী, যাদের মধ্যে ৩০,০০০-এর অধিক মানুষ চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। তাঁদের এই আত্মত্যাগ আজও আমাদের কাছে গর্বের, আবার অনন্ত বেদনারও। তারা কেবল নিজেদের ভবিষ্যৎ নয়, গোটা জাতির মুক্তির আশায় রক্ত ঢেলেছিল রাজপথে।

তৎকালীন সরকার, নানা দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে চেয়েছিল। কিন্তু জনতার ঐক্য, প্রতিবাদ আর আত্মত্যাগ সে সব ষড়যন্ত্রকে ভেস্তে দেয়। রাস্তা, বিশ্ববিদ্যালয়, শহর—সব জায়গায় বেজে উঠেছিল মুক্তির সুর। এক বিশাল গণজোয়ারে ভেসে গিয়েছিল স্বৈরতন্ত্রের শেষ আশ্রয়।

শেখ হাসিনার পলায়ন সেই সময়ের এক প্রতীকী পরাজয় হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেকেই বলেন, সেটি ছিল তার রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে পলায়ন, আর জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সমার্থক। আজকের এই দিনে, জাতি সেই অগণিত শহীদদের স্মরণ করে, যাঁদের আত্মত্যাগে তৈরি হয়েছিল নতুন সম্ভাবনার দ্বার।

৩৬ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিন নয়; এটি জাতীয় বিবেকের জাগরণ, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের স্মারক। এ দিনটি আমাদের শেখায়—কোনো শাসকই জনগণের চেয়ে বড় নয়, আর গণআন্দোলনের শক্তি যদি একত্র হয়, তবে যেকোনো শক্তিশালী প্রাসাদও ধসে পড়ে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—জাতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য কি আদৌ পূরণ হয়েছে?

স্বাধীনতার পর থেকে বারবার আমরা পরিবর্তনের আশায় আন্দোলন করেছি, রক্ত দিয়েছি, আবার প্রতারিতও হয়েছি। কিন্তু আজও যদি আমরা শিক্ষা না নিই, তাহলে শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে।

আজকের দিনটি তাই কেবল স্মরণের নয়, পুনর্বিবেচনারও দিন। আমরা কি সেই ত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছি? সমাজে ন্যায়, গণতন্ত্র, ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি? না কি আবারও আমরা এক ভিন্ন প্রকার শোষণের শিকার হয়েছি?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়াটাই হবে শহীদদের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।

৩৬ জুলাইয়ের আত্মত্যাগ যেন ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে না যায়। এই দিনটি যেন আমাদের অহংকার এবং দায়বোধের উৎস হয়ে থাকে। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র গড়তে নিজেদের অঙ্গীকার নবায়ন করি।

Tag :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেলেন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের তিন বিজ্ঞানী

আজ ৩৬ জুলাই

Update Time : ০৯:০৭:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

৩৬ জুলাই – আজকের দিনটি ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে। এটি কেবল একটি তারিখ নয়, বরং এক বিপ্লবের নাম, যেখানে নিপীড়িত জনগণ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বুক চিতিয়ে। এই দিনটি গণ-অভ্যুত্থান দিবস নামে স্মরণীয় হয়ে আছে আমাদের জাতীয় চেতনার পরতে পরতে।

এটি কাল্পনিক তারিখ হলেও, এটি বহু মানুষের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে যাওয়া এক ঐতিহাসিক দিনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।  দীর্ঘ সময় ধরে চলা একদলীয় কর্তৃত্ববাদ, দুর্নীতি, গুম, খুন এবং বাক-স্বাধীনতার হরণের বিরুদ্ধে যখন দেশের মানুষ দিশেহারা, তখন ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণ মিলে গড়ে তোলে এক ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ৩৬ জুলাই তারিখে তারা রাজপথে নেমে আসে—শুরু হয় এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান।

এই দিনটি কেবল একটি সরকার পতনের দিন নয়—এটি ছিল নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের দিন। এই বিপ্লবে জীবন উৎসর্গ করেন প্রায় ২০০০ ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল রক্তে। আহত হন হাজার হাজার আন্দোলনকারী, যাদের মধ্যে ৩০,০০০-এর অধিক মানুষ চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। তাঁদের এই আত্মত্যাগ আজও আমাদের কাছে গর্বের, আবার অনন্ত বেদনারও। তারা কেবল নিজেদের ভবিষ্যৎ নয়, গোটা জাতির মুক্তির আশায় রক্ত ঢেলেছিল রাজপথে।

তৎকালীন সরকার, নানা দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে চেয়েছিল। কিন্তু জনতার ঐক্য, প্রতিবাদ আর আত্মত্যাগ সে সব ষড়যন্ত্রকে ভেস্তে দেয়। রাস্তা, বিশ্ববিদ্যালয়, শহর—সব জায়গায় বেজে উঠেছিল মুক্তির সুর। এক বিশাল গণজোয়ারে ভেসে গিয়েছিল স্বৈরতন্ত্রের শেষ আশ্রয়।

শেখ হাসিনার পলায়ন সেই সময়ের এক প্রতীকী পরাজয় হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেকেই বলেন, সেটি ছিল তার রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে পলায়ন, আর জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সমার্থক। আজকের এই দিনে, জাতি সেই অগণিত শহীদদের স্মরণ করে, যাঁদের আত্মত্যাগে তৈরি হয়েছিল নতুন সম্ভাবনার দ্বার।

৩৬ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিন নয়; এটি জাতীয় বিবেকের জাগরণ, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের স্মারক। এ দিনটি আমাদের শেখায়—কোনো শাসকই জনগণের চেয়ে বড় নয়, আর গণআন্দোলনের শক্তি যদি একত্র হয়, তবে যেকোনো শক্তিশালী প্রাসাদও ধসে পড়ে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—জাতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য কি আদৌ পূরণ হয়েছে?

স্বাধীনতার পর থেকে বারবার আমরা পরিবর্তনের আশায় আন্দোলন করেছি, রক্ত দিয়েছি, আবার প্রতারিতও হয়েছি। কিন্তু আজও যদি আমরা শিক্ষা না নিই, তাহলে শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে।

আজকের দিনটি তাই কেবল স্মরণের নয়, পুনর্বিবেচনারও দিন। আমরা কি সেই ত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছি? সমাজে ন্যায়, গণতন্ত্র, ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি? না কি আবারও আমরা এক ভিন্ন প্রকার শোষণের শিকার হয়েছি?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়াটাই হবে শহীদদের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।

৩৬ জুলাইয়ের আত্মত্যাগ যেন ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে না যায়। এই দিনটি যেন আমাদের অহংকার এবং দায়বোধের উৎস হয়ে থাকে। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র গড়তে নিজেদের অঙ্গীকার নবায়ন করি।