১২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আনোয়ারুল হক কামাল: নোয়াখালীর এক নির্মোহ ও নীতিবান জননেতার অবসান

১৯৫৮ সালের ১৫ জুলাই নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভার বাটরা গ্রামের চাপরাশি বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন আনোয়ারুল হক কামাল। পিতা নজির উল্যা ও মাতা আয়েশা বেগমের স্নেহ-ছায়ায় বেড়ে ওঠা এই মানুষটি শৈশব থেকেই সততা, বিনয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতার শিক্ষা অর্জন করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন এবং ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

তার জীবন ছিল মূলত সংগ্রাম, ত্যাগ ও নীতি-আদর্শের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর রাজনীতিতে তিনি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন সংগঠনের এক নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব। নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দলীয় ঐক্য, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানুষের কল্যাণে ছিলেন নিরলস কর্মী। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের নীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সর্বদা জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

তার রাজনৈতিক পথচলা  সহজ ছিল না। দমন-নিপীড়ন, জেল-হাজত, রাজনৈতিক প্রতিকূলতা—সবকিছুকে অটল সাহস ও দৃঢ় বিশ্বাসে মোকাবিলা করেছেন। দলীয় কোন্দল নিরসনে, সাংগঠনিক ঐক্য রক্ষায় এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে তার অবদান অনস্বীকার্য।

২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট ভোর ৬টায় ঢাকার বারডেম হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “আনোয়ারুল হক কামালের মৃত্যুতে নোয়াখালী জেলা ও সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির যে ক্ষতি হলো, তা সহজে পূরণ হবার নয়।” বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মী তার মৃত্যুতে শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

তার ব্যক্তিজীবন ছিল যেমন বিনয়ী, তেমনই নিঃস্বার্থ। রাজনীতিতে সততা ও স্বচ্ছতার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থেকেও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিলাসিতার কোনো ছোঁয়া রাখেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার নিজের গ্রামে ছিল কেবল একটি ভাঙাচোরা টিনের ঘর—যা যেন সাক্ষ্য দেয় যে, রাজনীতি তার কাছে কখনোই অর্থোপার্জনের মাধ্যম ছিল না; বরং মানুষের সেবা করার পবিত্র দায়িত্ব ছিল তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

তার চলে যাওয়া শুধু একজন নেতার বিদায় নয়; এটি নোয়াখালীর রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিরল নীতি ও আদর্শের অবসান। সোনাইমুড়ীর আকাশ-বাতাস আজও যেন তার অনুপস্থিতির শূন্যতায় থমকে আছে। জনসেবায় নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটি রেখে গেছেন স্ত্রী ও এক পুত্র সন্তান, রেখে গেছেন অসংখ্য অনুরাগী ও শুভাকাঙ্ক্ষী, যারা তার সততা, ত্যাগ ও মানবিকতার স্মৃতি চিরকাল হৃদয়ে ধারণ করবে।

আনোয়ারুল হক কামাল : এক নির্মোহ ও নীতিবান জননেতার অবসান
আনোয়ারুল হক কামালের গ্রামের বাড়ি

আনোয়ারুল হক কামাল ছিলেন এক নির্লোভ, নীতিবান ও জনদরদী নেতা—যার জীবন ও কর্ম আগামীর রাজনীতিবিদদের জন্য হয়ে থাকবে এক আলোকবর্তিকা। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন এই মহান মানুষটিকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দান করেন এবং শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দান করেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেলেন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের তিন বিজ্ঞানী

আনোয়ারুল হক কামাল: নোয়াখালীর এক নির্মোহ ও নীতিবান জননেতার অবসান

Update Time : ০৯:৩২:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

১৯৫৮ সালের ১৫ জুলাই নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভার বাটরা গ্রামের চাপরাশি বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন আনোয়ারুল হক কামাল। পিতা নজির উল্যা ও মাতা আয়েশা বেগমের স্নেহ-ছায়ায় বেড়ে ওঠা এই মানুষটি শৈশব থেকেই সততা, বিনয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতার শিক্ষা অর্জন করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন এবং ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

তার জীবন ছিল মূলত সংগ্রাম, ত্যাগ ও নীতি-আদর্শের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর রাজনীতিতে তিনি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন সংগঠনের এক নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব। নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি দলীয় ঐক্য, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানুষের কল্যাণে ছিলেন নিরলস কর্মী। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের নীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সর্বদা জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

তার রাজনৈতিক পথচলা  সহজ ছিল না। দমন-নিপীড়ন, জেল-হাজত, রাজনৈতিক প্রতিকূলতা—সবকিছুকে অটল সাহস ও দৃঢ় বিশ্বাসে মোকাবিলা করেছেন। দলীয় কোন্দল নিরসনে, সাংগঠনিক ঐক্য রক্ষায় এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে তার অবদান অনস্বীকার্য।

২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট ভোর ৬টায় ঢাকার বারডেম হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “আনোয়ারুল হক কামালের মৃত্যুতে নোয়াখালী জেলা ও সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির যে ক্ষতি হলো, তা সহজে পূরণ হবার নয়।” বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মী তার মৃত্যুতে শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

তার ব্যক্তিজীবন ছিল যেমন বিনয়ী, তেমনই নিঃস্বার্থ। রাজনীতিতে সততা ও স্বচ্ছতার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থেকেও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিলাসিতার কোনো ছোঁয়া রাখেননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার নিজের গ্রামে ছিল কেবল একটি ভাঙাচোরা টিনের ঘর—যা যেন সাক্ষ্য দেয় যে, রাজনীতি তার কাছে কখনোই অর্থোপার্জনের মাধ্যম ছিল না; বরং মানুষের সেবা করার পবিত্র দায়িত্ব ছিল তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

তার চলে যাওয়া শুধু একজন নেতার বিদায় নয়; এটি নোয়াখালীর রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিরল নীতি ও আদর্শের অবসান। সোনাইমুড়ীর আকাশ-বাতাস আজও যেন তার অনুপস্থিতির শূন্যতায় থমকে আছে। জনসেবায় নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটি রেখে গেছেন স্ত্রী ও এক পুত্র সন্তান, রেখে গেছেন অসংখ্য অনুরাগী ও শুভাকাঙ্ক্ষী, যারা তার সততা, ত্যাগ ও মানবিকতার স্মৃতি চিরকাল হৃদয়ে ধারণ করবে।

আনোয়ারুল হক কামাল : এক নির্মোহ ও নীতিবান জননেতার অবসান
আনোয়ারুল হক কামালের গ্রামের বাড়ি

আনোয়ারুল হক কামাল ছিলেন এক নির্লোভ, নীতিবান ও জনদরদী নেতা—যার জীবন ও কর্ম আগামীর রাজনীতিবিদদের জন্য হয়ে থাকবে এক আলোকবর্তিকা। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন এই মহান মানুষটিকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দান করেন এবং শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দান করেন।